কাশ্মীর নিয়ে ভারতের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে পাক – চীন ফ্রন্ট


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০২১, ৬:২৪ অপরাহ্ন
কাশ্মীর নিয়ে ভারতের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে পাক – চীন ফ্রন্ট

মোদি সরকার যদিও কাশ্মীর সমস্যার একটা চূড়ান্ত সমাধান খুঁজে পেয়েছেন এবং সেটা তিনি বাস্তবায়ন করে ফেলেছেন, কিন্তু জাতিসংঘের এজেন্ডায় কাশ্মীর এখনও অমীমাংসিত ইস্যুই রয়ে গেছে। ভারত সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুরোধ জানিয়েছে যাতে কাশ্মীরকে তাদের সমস্যার তালিকা থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া হয়।

এতেই বোঝা যায় যে, ভারতের পদক্ষেপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতিসংঘের তালিকা থেকে সেটা বাদ পড়েনি। বাস্তবতা এর বিপরীত – নিরাপত্তা পরিষদ এখন যে কাশ্মীর ইস্যুতে অধিবেশনে বসছে, তাতে বোঝা যায় ভারতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে।

কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করার কারণেই যে শুধু ভারত নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডা থেকে কাশ্মীরকে বাদ দেয়ার অনুরোধ করেছে, তা নয়, বরং কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অব্যাহতভাবে তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় এর সমাধান খোঁজার যে চেষ্টা করছে পাকিস্তান, তার জবাবেই নিরাপত্তা পরিষদে এই অনুরোধ করেছে ভারত।

২০১৯ সালের নিরাপত্তা কাউন্সিলের রিপোর্টের উপর দেয়া এক বিবৃতিতে ভারত অভিযোগ করেছে যে, পাকিস্তান একটি পুরনো এজেন্ডাকে বারবার কাউন্সিলের এজেন্ডা হিসেবে আলোচনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে যেটা “কাউন্সিলের এজেন্ডা থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া দরকার”।

তবে, নিরাপত্তা পরিষদ যে ভারতের দাবির স্বীকৃতি দেয় না, তার প্রমাণ হলো যেভাবে তারা কাশ্মীরের বিতর্কিত অঞ্চলে নিজেদের সরাসরি উপস্থিতি বজায় রেখেছে, এবং এখনও তারা এটাকে ‘ভারত-পাকিস্তান প্রশ্ন’ হিসেবেই উল্লেখ করে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডা থেকে একমাত্র তখনই কোন এজেন্ডা বাদ দেয়া হতে পারে, যখন বিষয়টির সমাধান হয়ে যায় বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যখন শেষ পর্যন্ত একটা ঐক্যমতে আসে। কিন্তু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে এ সবের কোনটাই হয়নি।

কাশ্মীরকে এজেন্ডার তালিকা থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়ার যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে ভারতের, সেটার উৎস হলো তাদের অভ্যন্তরীণ সংবিধান পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ব্যাপারে কোন ঐক্যমত হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদকে কাশ্মীর ইস্যু স্থায়ীভাবে বাদ দিতে বলে মোদি সরকার শুধু তাদের [অবৈধ] চূড়ান্ত সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের চেষ্টাটাই করে যাচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মীরকে ইস্যু হিসেবে বাদ দিতে অস্বীকার করেছে এবং এতে বোঝা গেছে যে, ভারতের কাশ্মীরকেন্দ্রিক দুর্ভোগ এখনও সক্রিয় রয়েছে। বিতর্কিত এই অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় রাখতে পাক-চীন যে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে, সে কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। ভারত কাশ্মীরকে সংযুক্ত করার পর থেকে নিরাপত্তা পরিষদ এই ইস্যুতে তিনটি রুদ্ধদ্বার অধিবেশন করেছে।

চীন যে কারণে এই ইস্যুটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, ভারতের নিজের পদক্ষেপের কারণেই সেটা হয়েছে। ভারত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর বিতর্কিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসেবে সংযুক্ত করেছে, যেটা চীনকে জোর করে এখানে টেনে এনেছে।

লাদাখের মর্যাদা পরিবর্তনের মাধ্যমে, ভারত বোকার মতো চীনকে এ অঞ্চলে তাদের মনোযোগ টেনে আনতে বাধ্য করেছে এবং ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। চীন মনে করে যে, নয়াদিল্লীর একতরফা পদক্ষেপের কারণে তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডের দাবি এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং উচ্চকণ্ঠে যে দাবি করেছেন যে, আকসাই চিন ভারত ফিরিয়ে নেবে, সেই দাবি আগুনে আরও তেল যোগ করেছে এবং চীনা ড্রাগন এখন সেই আগুন উদ্গিরণ করছে মাত্র।

এতেই বোঝা যায় ভারত আর চীন কেন লাদাখ অঞ্চলে অন্তত দুই বার সঙ্ঘাতে জড়িয়েছে। বোঝা যাচ্ছে চীন লাদাখে একজন সরাসরি খেলোয়াড় এবং ভারতের একতরফা পদক্ষেপের কারণে সার্বিকভাবে কাশ্মীর বিবাদে তাদের অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে।

অন্যভাবে বললে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যদিও কাশ্মীরকে ভারত-পাকিস্তান প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করছে, কিন্তু কাশ্মীর কার্যত আর দ্বি-পাক্ষিক অবস্থানে সীমিত নেই।

চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতা এবং জাতিসংঘে তাদের সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থেকে জোরালোভাবে এটা বোঝা যায় যে, বাস্তবতা মৌলিকভাবে বদলে গেছে এবং এই বিবাদটির ত্রিপাক্ষিক হয়ে ওঠা ঠেকাতে ভারতের ব্যর্থতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

পাকিস্তান অন্যদিকে নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছে। নতুন মানচিত্রে কাশ্মীরের ব্যাপারে পাকিস্তান শুধু নিজের অবস্থানই প্রকাশ করেনি, একইসাথে চীনের সংবেদনশীলতাকে তারা বিবেচনায় নিয়েছে এবং ভারত-চীন লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলকে (এলএসি) অচিহ্নিত ফ্রন্টিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছে।

মানচিত্রে পাকিস্তানকে চীনা প্রশাসনিক অঞ্চলের সাথে যুক্ত দেখানো হয়েছে। ফলে এখানে জোরালো ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, ভারতকে ঠেকাতে চীন-পাকিস্তানের যৌথ সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে। এই মানচিত্রে পাকিস্তান আর চীনের দাবির একটা দৃশ্যমান প্রকাশ ঘটেছে, এতে শাকসগাম উপত্যকা দিয়ে দুই দেশকে সংযুক্ত দেখানো হয়েছে।

গিলগিট-বালটিস্তান অঞ্চলের এই বন্দরের মাধ্যমে ১৯৬৩ সালের সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী চীন আর পাকিস্তান যুক্ত হয়েছে। এর পূর্ব দিকে রয়েছে আকসাই চিন অঞ্চল, কাশ্মীরের ব্যাপারে চীনের দাবিকৃত অঞ্চলের প্রান্ত এটা। ১৯৬২ সালের ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় থেকে এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে আসছে চীন।

নতুন মানচিত্র হয়তে কাগজে আঁকা ছবি মাত্র, কিন্তু এটা একই সাথে ‘দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের’ ভূমিকা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যেখানে চীনা আর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সমন্বিত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে নতুন সীমানা টানবে।

এই মুহূর্তে চীনারা ট্রান্স হিমালয়ান ইকোনমিক করিডোর তৈরির জন্য পাকিস্তান, আফগানিস্তান আর নেপালের সাথে কথা বলছে। এই করিডোর নেপালকে পাকিস্তানের সাথে এবং ক্রমান্বয়ে তিব্বত ও জিনজিয়াং হয়ে আফগানিস্তানের সাথে যুক্ত করবে। বাস্তবতা হলো নেপাল আর ভারত আগে থেকেই আলাদা সীমান্ত বিবাদে জড়িয়ে আছে। এতে এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে ভারত-বিরোধী খেলোয়াড় হিসেবে নেপালের গুরুত্বটা আরও জোরদার হয়েছে।

2021-05-04 18:24:24

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: