ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে বিপাকে জর্ডান


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন
ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে বিপাকে জর্ডান

ইসরায়েলের উপর ইরানের পাল্টা নজিরবিহীন আক্রমণ এবং বৈরিতা বাড়ার সম্ভাবনা বিপাকে ফেলেছে অঞ্চলটির একটি প্রধান পশ্চিমা মিত্র এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলির কাছে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত জর্ডানকে।

শনিবার রাতে ইরান যখন ইসরায়েলে আক্রমণ চালায়, তখন জর্ডান তার রাজধানী আম্মানের উপর দিয়ে উড়ে আসা কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনকে গুলি করতে সহায়তা করেছিল। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সেসময় বলেছিলেন যে, দেশটি ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে তার অঞ্চলের জন্য ‘একটি সত্যিকারের বিপদ’ হিসাবে বিবেচনা করেছে।

এতে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে ‘একজন বিশ্বাসঘাতক’ বলে অভিহিত করেছে এবং তেহরান-পন্থীরা ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত বাদশাহ আবদুল্লাহর ডিজিটাল প্রতিকৃতি ছড়িয়ে দিয়েছে। জর্ডান কর্তৃপক্ষ এই অপমান বন্ধের দাবিতে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।

ইসরায়েল অক্টোবর থেকে গাজায় যে আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিরা যারা মারা গেছে বা যাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, তাদের এবং হামাসের সমর্থনে জর্ডানে ইতিমধ্যেই কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে।

ইরান-সমর্থিত ইরাকি যোদ্ধানবাহিনীর নেতা আবু আলী আল-আসকারি ইসরায়েলের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য জর্ডানে ১২হাজার যোদ্ধার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্রের বন্যা বইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরে দেশটির কর্তৃপক্ষ উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে।

জর্ডানের পরিস্থিতি আবুধাবি এবং রিয়াদে নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ উভয়েই বাদশাহ আবদুল্লাহকে তাদের সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

সউদী রাজতন্ত্রের ঘনিষ্ঠ সউদী ভাষ্যকার আলি শিহাবি বলেছেন, ‘সউদী আরবের জন্য জর্ডান উপসাগরীয় অঞ্চলে আরও ইরানি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে একটি বাধা।’ জর্ডানে প্রায় ১১ কোটি লোকের মধ্যে অনেকেই ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের বংশধর, যারা ইরাক, ইসরায়েল, সউদী আরব, সিরিয়া এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি ভূখ-ের মধ্যে নিষ্পেষিত হয়েছে।

সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে যে তারা শনিবারের হামলার পর আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, তবে তাদের কেউই স্পষ্টভাবে ইরানের নিন্দা করেনি। এদিকে, শিহাবি রবিবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মামলাকা (কিংডম) টিভিকে বলেন, ‘ইরানের প্রতি আমাদের বার্তা হল যে আপনার সমস্যা ইসরায়েলের সাথে এবং জর্ডানকে অপমান করার যে কোনো প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য এবং স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যাত।’

শিহাবি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুরও কড়া সমালোচনা করেছেন, যিনি তেহরানের সাথে সংঘর্ষের উস্কানি দিতে, বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে এবং গাজার যুদ্ধ শেষ করার জন্য ওয়াশিংটন থেকে যে চাপের মধ্যে রয়েছেন, তা প্রশমিত করতে ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলা করেছেন বলে শিহাবি অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে উত্তেজনার মূল কারণ হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করার জন্য তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে সেটি।’

রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে কথা বলার সময় বাদশাহ আবদুল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার প্রতি ইসরায়েলের যে কোনও প্রতিশোধ এই অঞ্চলে সংঘাতকে প্রসারিত করবে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জর্ডান তার ভূমিতে আঞ্চলিক যুদ্ধের সুযোগ দেবে না।’

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: