ভারত ও চীন লাদাখ অঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্টে মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। এখন এই উত্তপ্ত সীমান্তটি দুই দেশের মধ্যে নতুন বাস্তবতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
ভারত আগে থেকেই পাকিস্তানের সাথে উত্তপ্ত সীমান্তে ছিল। সেখানে ক্রসফায়ার নিয়মিত ঘটনা। আর এখন এর সাথে যোগ হলো চীন।
ভারত ও পাকিস্তান সীমান্ত আরো আগে থেকেই উত্তপ্ত ছিল। এর বিপরীতে ভারত ও চীন সীমান্ত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু সোমবার উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক গুলি করার অভিযোগ করেছে, যা ছিল দুই দেশের মধ্যকার কার্যত সীমান্ত অ্যাকচুয়াল লাইন অব কন্ট্রোলে প্রথম গুলিবর্ষণ। চীন বলছে, ভারত সীমান্তে তাদের সৈন্য সমবেত করেছে। তবে ভারত তা অস্বীকার করেছে। নয়া দিল্লী বরং আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বেইজিংকে অভিযুক্ত করেছে।
লাদাখ অঞ্চলে গত ৫ মাস চীন ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে নানা ঘটনা দেখা গেছে। এর ফলে সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতে এই গুঞ্জন চলছে যে মহামারীর মধ্যে ও বেইজিং যখন দক্ষিণ চীন সাগরেও উত্তেজনার মধ্যে পড়েছে, তখন চীন কেন আরেকটি ফ্রন্ট খুলল।
এর একটি কারণ হতে পারে, সীমান্তে ভারতের রাস্তা ও সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণের ফলে আরো সৈন্যের সমাবেশের সুযোগ সৃষ্টি।
আরেকটি কারণও হতে পারে। তা হলো এক বছর আগে ভারত তার মানচিত্র পরিবর্তন করে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পৃথক করে লাদাখকে নতুন করে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে।
জুনে গালওয়ান ভ্যালিতে চীনাদের সাথে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।
গত মাসের শেষ দিকে ভারতীয় সৈন্যরা সফলভাবে চীনাদের প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণ দিকে বিভিন্ন উচ্চতর পয়েন্টে অগ্রযাত্রা থামাতে সক্ষম হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, উভয় পক্ষ দুর্গম হিমালয় ভূখণ্ডে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ায় এলএসিতে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। শীতকালেও উভয়পক্ষ সেখানে থেকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নয়া দিল্লীতে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক হর্ষ ভি পান্ত বলেন, আমরা যা দেখছি তা হলো খুবই অস্থিতিশীল এলএসি। আর ভারত ও চীনকে এই অবস্থার সাথেই বসবাস করতে হবে।
তিনি বলেন, চীন এলএসিতে শক্তি বাড়িয়েছে, তারা গত ৫ মাসে কিছু ভূমিও দখল করেছে। অতীতে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে চায়নি। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, শক্তি বাড়ানো ছাড়া তাদের হাতে বলতে গেলে আর কোনো বিকল্প নেই।
ভারত ও চীন ১৯৬২ সালে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। ভারতের প্রতিবেশী এলাকায় বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিতে দেশ দুটির মধ্যে অস্বস্তি সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে।
চীন উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় অরুনাচল প্রদেশের ওপর দাবি করেছে। এটি ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতের হাতে রয়েছে।
আর ভারত আকসাই চীনের ৩৮ হাজার বর্গমাইল এলাকার ওপর চীনের দখলদারিত্বকে অবৈধ হিসেবে অভিহিত করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, উভয় দেশ সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও বাস্তবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাই রয়েছে।
জওহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়নিস স্টাডিজের অধ্যাপক শ্রীকান্ত কোন্দাপালি বলেন, এটা উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ১০ হাজার সৈন্য একে অপরের কাছ থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে অবস্থান করছে।
অবশ্য তারপরও দুই দেশ সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সামান্যই ফল এসেছে। তবে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাশিয়া রওনা হয়েছেন। তিন সম্মেলনের ফাঁকে তার চীনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ইয়ির সাথে বৈঠকে বসবেন।
অধ্যাপক পন্ত বলেন, বর্তমানে কোনো পক্ষই লাদাখ অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট অবস্থান থেকে সরে যাওয়াতে কোনো কল্যাণ দেখছে না। ফলে সমাধানও শিগগিরই দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এ কারণেই এলএসিতে উত্তাপ থেকে যাবে। আস্থা পুরোপুরি ভেঙে গেছে, দ্রুত নেমে পড়ছে।
2021-05-04 18:24:24
আপনার মতামত লিখুন :