আজ পবিত্র শুক্রবার, শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন। সপ্তাহের সকল দিনের শ্রেষ্ঠ দিন জুম্মাবার। আরবি শব্দ জুমুআ-এর অর্থ একত্র হওয়া। আল্লাহতায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।
আল্লাহতায়ালা এই দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কোরআনে ইরশাদ করেন, মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ। সূরা জুমুআ :০৯ ।
শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেন তার খুতবায়। প্রথম হিজরিতে জুমার নামাজ ফরজ হয়।
রাসূলুল্লাহ সা: হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।
হজরত তারেক ইবনে শিহাব রা: থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি—এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য ফরজ)। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। তাফসিরে মাজহারি ,খণ্ড : ৯ , পৃষ্ঠা : ২৮৩
মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ কোনো এক জুমার দিনে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম আঃ ও হাওয়া আঃ কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন।
জুমার দিনে কিছু করণীয়-বর্জনীয় রয়েছে। যা নিম্নে উল্লেখ করা হল:
জুমার দিন গোসল করা। যাদের ওপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এদিনে গোসল করাকে রাসুল সা: ওয়াজিব করেছেন। বোখারি : ৮৭৭। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুল কাটাও একটি ভালো আমল।
জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। বোখারি : ৮৮০। মেসওয়াক করা। বোখারি : ৮৮৭ü। গায়ে তেল ব্যবহার করা। বোখারি : ৮৮৩। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। ইবনে মাজাহ : ১০৯৭।
মুসল্লিদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। তিরমিজি : ৫০৯, ইবনে মাজাহ : ১১৩৬। মনোযোগসহ খুতবা শোনা ও চুপ থাকা ওয়াজিব। বোখারি : ৯৩৪, মুসলিম : ৮৫৭। আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। বোখারি : ৮৮১, মুসলিম : ৮৫০।
পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা। আবু দাউদ : ৩৪৫। জুমার দিন ফজর নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা সিজদা আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া। বোখারি : ৮৯১, মুসলিম : ৮৭৯। সূরা জুমা ও মোনাফিকুন দিয়ে জুমার সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলাক ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। মুসলিম : ৮৭৭। জুমার দিন ও রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। আবু দাউদ : ১০৪৭। এদিন বেশি বেশি দোয়া করা। বোখারি : ৯৩৫।
মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। আবু দাউদ : ৩৪৩। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। বোখারি : ৯১১, মুসলিম : ২১৭৭। জুমার আগে মসজিদে জিকর বা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ, গোল গোল হয়ে না বসা। আবু দাউদ : ১০৮৯।
2021-03-11 20:29:51
আপনার মতামত লিখুন :